ভ্রমণ মানেই হলো মুক্তি, আনন্দ। কিন্তু মানুষ ঘুরতে যায় কেন? কিসের লোভে? কিছু পাওয়ার জন্য না কি নিজেকে হারাবার জন্য। রোজকার দৈনন্দিন জীবন যুদ্ধে মানুষ যখন ক্রমশঃ হাঁপিয়ে ওঠে তখন শক্তি সঞ্চয়ের জন্য মুক্তির খোঁজে বেরোয়। আর সেই মুক্তি পেতে বিভিন্ন জানা অজানা পথে চেনা অচেনা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সে পাড়ি দেয়।
প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে কোথাও আমরা নিজেকে হারিয়ে ফেলি। আমরা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস তো নিই কিন্তু কুম্ভক করি না অর্থাৎ সেটা অনুভব করি না। নিজেদের ভেতরের প্রতিভা বা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিস্ফুটনের দরজাগুলো বন্ধ করে দিই। আমরা তখন আমাদের চারপাশের জগতের চাওয়া পাওয়ার বিশ্লেষণে অনেক বেশি মনোযোগ দিই। নিজেদের অস্তিত্বের কথা একেবারে ভুলে যাই। একটা অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকি। তাই যখনই এই প্রতিযোগিতার খেলায় হাঁপিয়ে যাই আমরা মুক্তির পথ খুঁজি; আর সেই মুক্তিই হলো ভ্রমণ।
জীবন মানেই হলো একটা ভারসাম্য, এই ভারসাম্যর তারতম্য হলেই আমাদের মধ্যে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। প্রতিযোগিতার খেলায় এই ভারসাম্য কখনও কখনও নষ্ট হয়ে যায় যাকে ঠিক করার জন্য আমরা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া অস্তিত্বকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ি। যে সময়গুলো নিজেদের নিঃশেষ করে প্রতিযোগিতায় লাগাতাম, সেই সময়গুলোই ভ্রমণে প্রকৃতির সাথে গল্প করে বন্ধুত্ব করে কাটাই যে আমাদের নিজেদের হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাগুলোকে খুঁজে এনে দেয়। প্রকৃতি আমাদের নিজেকে চিনতে শেখায়, নিজেদের সাথে পরিচয় করায় এবং প্রকৃতির মধ্যে যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তাদের সঙ্গেও আমাদের পরিচয় করায়।। দৈনন্দিন জীবনের কোলাহলে যা আমরা শুনতে পাই না, দেখতে পাই না প্রকৃতির নিঃশব্দতা আমাদের সেই অশ্রুতকে শোনায়, অদেখাকে দেখায়।
ভ্রমণ মানেই হলো সম্পূর্ণ আনন্দ কারণ ভ্রমণ আমাদের প্রতিযোগিতা নয় সহযোগিতা শেখায়; অন্যের সঙ্গে দ্বন্দ্ব নয় আনন্দ ভাগ্ করে নেওয়া শেখায়। সে আমাদের পরম সহচরী। ভ্রমণে আমরা নিজেকে প্রমাণ করি না; বরং নিজেকে উজাড় করে তার আনন্দ উপভোগ করি। তখনই আমরা গেয়ে উঠি :
"আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে।।...."
ঋতুপর্ণা বসাক