কালের বিস্ময়!!!
পাহাড়! নামের মধ্যেই যেন এক রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে। যুগ যুগ ধরে এক ভাবে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে; আদি অনন্ত কাল ধরে ধৈর্য্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ দিয়ে চলেছে সে। কত অসংখ্য সভ্যতার সাক্ষী এই পাহাড়। যুগ যুগ ধরে কত সভ্যতা কত সৃষ্টি কত ধ্বংসের যে সাক্ষী তা সে শুধু নিজেই জানে, আর জানে তার সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং ঈশ্বর।
কোনটা বেশী আশ্চর্যের - পাহাড়ের নিঃশব্দতা, পাহাড়ের শান্ত প্রকৃতি, তার ধৈর্য্য, তার সৌন্দর্য না কি তার নিঃশব্দের শব্দ। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় যেন সে কথা বলছে, বলছে "আদি অনন্ত ধরে আমি এখানে আছি। যুগ যুগ ধরে তুমি আমার কাছে এসেছো, দেখছো, আমার সৌন্দর্যের আস্বাদন করেছো, তারপর চলে গেছো। আমি তোমার কাছে প্রতিবারই নতুন লেগেছি, কিন্তু তুমি আমার কাছে নতুন নও। আমি তোমার প্রত্যেক রূপের মধ্যে তোমার তুমিকে চিনতে পেরেছি। তুমি আমার অতিথি নও; তুমি আমার আপনজন। তোমার অবাক দৃষ্টি, আমাকে নিয়ে জিজ্ঞাসা আমাকে আনন্দ দিয়েছে, আমাকে পরিপূর্ণ করেছে। "
আদি অনন্ত কাল থেকে এই পাহাড় তার জায়গায় অবস্থান করছে, অনড়, অবিচল, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। একদিকে তার স্থিরতা, তার কাঠিণ্য, অন্যদিকে তার প্রশান্তিতে সমাহিত সৌন্দর্য্য এক বিস্ময়ের পরিচয় বহন করে। কখনো ঝর্ণার মাধ্যমে তার আনন্দধারা বইছে, আবার কখনো ধস নামিয়ে সে তার ক্রোধগ্নি প্রকাশ করছে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হয় এক সন্ন্যাসী যেন যুগ যুগ ধরে মানব কল্যাণের হিতার্থে অবিরত ধ্যান করে চলেছে। ঝড়, বৃষ্টি, তাপ কোনো কিছুই যেন তাঁকে টলাতে পারে না। সে নিজের তপস্যায় মগ্ন, সমাধিস্থ।
পাহাড়ের গায়ে ছোটো ছোটো গর্তগুলো যেন কোনো গুপ্ত রহস্যের ঈশারা করে। হয়তো কোনো গুপ্ত যোগী লোকচক্ষুর অন্তরালে যুগ যুগ ধরে সাধনা করে যাছেন যার সাক্ষী এই পাহাড়। পাহাড়ের এপারে এক দেশ তো ওপারে অন্য আর এক দেশ। তাহলে মাঝখানে কি শুধুই পাথর বা কঠিন কিছু, না কি অন্য কিছু? শোনা যায় গুপ্ত যোগীরা এইসব জায়গায় সাধনা করেন যেখানে সাধারণ মানুষ পৌঁছাতে পারে না। এদের সাধনাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে ঐ পাহাড়। তারই ভরসায় প্রাচীন মুনি ঋষিরা তাঁদের তপস্যা করে চলেছেন। মানুষ আর যোগীদের মাঝখানের বেড়া ঐ পাহাড়।
কত গাছপালা, পশুপাখি, কীট পতঙ্গের আশ্রয় হলো ঐ পাহাড়। এদের সবাইকে নিয়ে বটবৃক্ষের মতো এক হয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়ের গায়ে কতো অজানা ফুল, ছত্রাক, বাহারি গাছ দেখা যায় যাদের কেউ কখনো নামই হয়তো শোনেনি বা দেখেনি। তাদের যত্ন করারও কেউ নেই। প্রকৃতির রক্ষণাবেক্ষণে তারা পাহাড়ের কোলে জন্মায়, নিশ্চিন্তে বড় হয়, নৈসর্গিক শোভা দেয়, আবার শেষে ঝরেও যায়। এই অজানা সব কীট পতঙ্গ, গাছপালা পাহাড়ের প্রকৃত আপনজন, তার আসল পরিবার। এদের থেকে ভালো আর কেউ পাহাড়কে জানে না, চেনে না। কাউকে জানতে হলে তার সাথে যে মিশতে হয়, লেগে থাকতে হয়। এরাই পাহাড়ের সেই দিনরাত্রি সর্বক্ষণের সাথী।
প্রকৃতির সবকিছুই একটা ভারসাম্য রক্ষা করছে। পাহাড়ও তার থেকে আলাদা নয়। কিন্তু মানুষ তা ভুলে গিয়ে নিজের সুবিধার্থে পাহাড়কে ব্যবহার করছে, ধ্বংস করছে। পাহাড় কিন্তু ক্ষতি করছে না, বরং মানুষই পাহাড়কে ধ্বংস করে নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছে যার একটা পরিণাম হলো ধস নামা। মানুষ পাহাড়কে ধ্বংস করে প্রকৃতির ভারসাম্যকে নষ্ট করছে যা সমগ্র প্রজাতির জন্য মারাত্মক দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
একই পাহাড় তার কত বিচিত্র রূপ! ভোরের কুয়াশায় যখন তার অস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসে তখনই সকালের সূর্যের আলোতে সে খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আবার দুপুরের সূর্যের তাপ যখন তার অন্তরের সব উত্তপ্ত করতে থাকে তখনই সন্ধের চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতা তাকে শীতল করে তোলে। রাতের অন্ধকার যেন তার নিঃশব্দতার সাথে কথা বলে, গভীর আলোচনা করে; যেন কত দিনের বন্ধুত্ব। একই পাহাড় তার ভিন্ন রূপ দিয়ে সে প্রকাশিত হয় জগতের সামনে। পাহাড়ের কোলে গাছের ফাঁকে কুয়াশায় ঘেরা ফাঁকগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেন এক রহস্যময় অন্য জগৎ রয়েছে সেখানে, সে যেন এক অজানা পৃথিবী। সবার অলক্ষ্যে কুয়াশার চাদর দিয়ে প্রকৃতি তাকে আড়াল করে রেখেছে। শুধু পাহাড় জানে সেই অজানা জগতের কথা, তাদের চরিত্রগুলোর কথা। দূর থেকে দেখলে ভয়ও হয় আবার রোমাঞ্চও জাগে!
পাহাড় বিভিন্ন মানুষের দৃষ্টিতে বিভিন্ন রূপে ধরা দিয়েছে। চিত্রশিল্পীরা চিত্র এঁকেছেন, কবিরা কবিতা লিখেছেন, গীতিকাররা গান বেঁধেছেন আবার লেখকরা গল্প, উপন্যাস লিখেছেন। পাহাড়কে জানার নেশায় মানুষ বারবার তার কাছে ছুটে গেছে; কেউ সফল হয়েছে, কেউ বিফল আবার কেউ প্রাণ পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু তাকে জানার উৎসাহ ফুরায়নি। পাহাড়ের বুকে কত যে বিস্ময় লুকিয়ে আছে তা মানুষ আজও জানে না। মানুষ কত চেষ্টা করে চলেছে তার প্রকৃত স্বরূপ জানার জন্য কিন্তু পাহাড় আজও তাদের কাছে এক অধরা বিস্ময় হয়েই রয়ে গেছে।
যুগ যুগ ধরে মানুষ এই ধ্যানমগ্ন ঋষি কে জানার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, প্রয়োজনে তার ক্রমাগত ক্ষতি করে যাচ্ছে, কিন্তু সে অধরাই রয়েছে। সে যে নিজেই ধরা দিতে চায় না কারণ তার এই অজানা রহস্যের মধ্যেই অনেকে বেঁচে আছে; অনেক স্থূল সূক্ষ্ম কার্যাবলী প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। একের জিজ্ঞাসা অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়ে যায় সেইজন্য পাহাড় প্রতিনিয়ত তপস্যা করে চলেছে। যেন এক ধ্যানমগ্ন যোগী নিজের স্থানে অবিচল হয়ে সব দুঃখ কষ্ট সহ্য করে তারই সন্তানদের সব অপরাধ ক্ষমা করে তাদেরই হিতার্থে যুগ যুগ ধরে সাধনা করে চলেছে।
ড: ঋতুপর্ণা বসাক
Just excellent.Maam apnar lekha joto porchi,tototai somriddho ho66i.Apnar moddhe kintu ekta Kobita r probondho sottwa ache jegulo khoob shundor bhabe beriye ashche.Eto shundor lekhar badhuni,eto rich realization shobar thake na.Apnar lekha porle totally ami mental image form korte pari,mone hoy jeno really incidents gulo choker samne ghotche.Keep writing more thought provoking blogs like this dearest Maam.All the best wishes👏👏🙏🙏🙂
ReplyDeletethank you Rusati.. your comments are real motivation.
DeleteU are most wlcm Maam
DeleteAto sundor kore likhecho didi.. barbar porchi.. asadharan description..❤❤❤❤🙏🙏🙏 lekhata chaliye jao..
ReplyDeletethank you Papri..
DeleteOsadharon maam... Ei prothom apni kichhu pathalen r ami khub mon diye porlam.. Rooo lukhun r pathate thakun💖
ReplyDeletethank you..:)
DeleteTui kintu akebare sahitik hoe jachish. Khub bhalo ar matured hieche lekha ta. Chalea ja.
ReplyDeletethank you Sushmita di..
DeleteKi apurba lekhani.Darun Rituparna.aro arokom lekha amader upahar dao.
ReplyDeletethank you..
DeleteArey ei pahar er lekha pore toh mone hochche eta tor attokotha. Nijer modhey somahito r dhyanmogno. Koto kichur sakhi.
ReplyDeleteOsadharon. Aro aro lekha upohar de amader🌷😍
thank you for your support and comment.:)
Delete