বৈচিত্র্যময় দিগ্বলয়!

 








দিগন্ত বলতে প্রথমেই মনে আসে এক কাল্পনিক রেখা যার আশেপাশে রঙের মেলা বসে, যাকে যত অতিক্রম করা যাবে তত বিস্ময় জাগবে। দিগন্ত প্রতিনিয়ত আমাদেরকে তার দিকে এগোনোর প্রবণতা তৈরী করে যার জন্য সবাই তাদের চেনা গন্ডি ছেড়ে অচেনার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় এক নতুন পরিবর্তনের জন্য। দিগন্ত হল অজানাকে আলিঙ্গন করে অচেনাকে আবিষ্কার করার আমন্ত্রণ

প্রতিদিন একই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয়, তার কোন পরিবর্তন নেই কিন্তু দিগন্ত পরিবর্তনশীল। প্রতিদিন নতুন নতুন রঙের খেলায় দিগন্তের আকাশ বিভিন্ন রূপে রঙিন হয়ে ওঠে। এক একটা রং, রূপ এক একটা আবেগ, মনের ভাব, একেক অর্থ বয়ে আনে। আবার সেই রঙের বাহারী খেলার কাল্পনিক রূপ কবি, সাহিত্যিকদের রচনায় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কেউ কেউ একে দুঃখের, কেউ আনন্দের, কেউ বা প্রেমের, আবার কেউ বা রাগের ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।

আকাশের বুকে দিগন্ত প্রতিনিয়ত হরেক রকমের রঙের মাধ্যমে জগৎকে বিভিন্ন বার্তা দেয়। ভোরের রং নতুন শুরুর, দিনের রং সারাদিনের কাজের, উদ্দীপনার, গোধূলির রং ঘরে ফেরার, আর রাতের কালো রং সব মিলে মিশে এক হয়ে যাবার বার্তা বয়ে আনে। ঊষার দিগন্ত যেমন নতুন শুরুর বার্তা দেয় গোধূলির দিগন্তও পুরোনোকে সঙ্গে নিয়ে নতুন সম্ভাবনার সন্ধান দেয়। দিগন্ত কোনকিছুতেই কোনভাবে সীমিত নয়।

দিগন্ত মানেই বিস্ময়! পাড়ে দাঁড়িয়ে এক অনুভূতি আর যত সামনে যাওয়া যায় তত আরও বিস্ময় বাড়ে বই কমে না। সেই বিস্ময়ের অনুসন্ধান করতে হলে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না, তাকে ছেড়ে এগোতে হবে। দিগন্তকে জানতে হলে পাড়কে ভুলতে হবে। কিছু পেতে গেলে কিছু ছাড়তে তো হবে। হয়তো পাড়ও তাই চায় কারণ পাড়েরতো উপায় নেই দিগন্তের কাছে যাওয়ার বা দিগন্তের উপায় নেই পাড়ের কাছে আসার। তাই আমাদের মধ্যে দিয়ে হয়তো দিগন্ত পাড়ের খোঁজ নেয় আর পাড় দিগন্তের।

দিগন্ত হল বাঁধনের প্রতীক যে আকাশ ও ধরিত্রীকে একসাথে মিলিয়ে দিয়েছে। এটা আমাদের বিভিন্নতাকে সঙ্গে নিয়ে বৈশাদৃশ্যকে মিলিয়ে সেতু বন্ধন করতে উদ্বুদ্ধ করে। দিগন্ত আমাদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভৌগোলিক সব বিভেদকে এক আকাশের নিচে এনে দাঁড় করিয়ে পরস্পর সংযুক্ততার কথা মনে করায়

একই আকাশের নিচে থাকা সত্ত্বেও আমাদের কারও দিগন্ত সমান নয়। এক আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে একেক জন একেক ভাবে দিগন্তকে হৃদয়ঙ্গম করে। প্রত্যেকে যে যার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দিগন্তকে অনুভব করে। কারও কাছে এটা শুধুমাত্র রঙের খেলা, কেউ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, কারও কাছে কোন আবেগের বহিঃপ্রকাশ, আবার কারও কাছে নতুন আবিষ্কারের ডাক।

দিগন্ত মানেই অজানা যে বহুকাল ধরে তার আবিষ্কারের জন্য প্রতীক্ষা করে রয়েছে যে কেউ কখন এসে তাকে আবিষ্কার করবে। আবিষ্কারক যদি তার ভয়কে জয় করে সাহসিকতার সঙ্গে দিগন্তের দিকে এগোতে শুরু করে তবে দিগন্তও তার দিকে এগিয়ে আসে; কারণ সেই অজানাও সবার সামনে প্রকাশিত হতে চায়। তারও তো তাড়া আছে, কতদিন আর অজানা হয়ে অপ্রকাশিত থাকবে?

দিগন্ত হল মানুষের কৌতূহল ও সুযোগের অসীম প্রতীক যা তাদেরকে তাদের নিজস্ব পরিষরের বাইরে তাকাতে উদ্বুদ্ধ করে, তাদের পরিসীমা ছাড়িয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে ও সেটাকে সত্যি করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগায় যেটা এক নতুন আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

"Surely, of all the wonders of the World, the Horizon is the greatest."

Freya Stark

ড: ঋতুপর্ণা বসাক

5 comments:

  1. Too good to be described.The combination of the mere 26 alphabets can't define this short essay.I'm speechless Maam & definitely this is the most appropriate & beautiful writing that synchronizes with Holi.Nature is the best Artist,so mysterious,so magical,full of wonders that captivate our souls,mesmerizes our minds & leaves us awestricken in each & every moment.😊🙏🙏🙏

    ReplyDelete
    Replies
    1. thank you 🙏😊

      Delete
    2. DIGONTER O TARA ACHE- this resonates me most. Wonderful expression of knowing the unknown. Thank you Rituparna for this beautiful blog.

      Delete
  2. DIGONTER O TARA ACHE- this resonates me most. Wonderful expression of knowing the unknown. Thank you Rituparna for this beautiful blog.

    ReplyDelete

শ্রোতা ও বক্তা

  শ্রোতা ও বক্তা শব্দ দুটো নিজেরাই নামের মধ্যে নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়। একজন বলে একজন শোনে। যে বলে সে বক্তা, আর যে শোনে সে ...

Popular Posts