Saturday, January 22, 2022

নিঃসঙ্গতা

 



নিঃসঙ্গতা জীবনের এক কঠিন বাস্তব রূপ যাকে কেউ আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আক্ষরিক ভাবে এর অর্থ বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে দেবে যা নির্ভর করে তারা কিভাবে একে উপলব্ধি করেছে। 'নিঃসঙ্গ' শব্দটা উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই  এক নেগেটিভ বা দুঃখজনক অনুভূতি বা চিন্তা মনে আসে যা আমাদের এক গভীর দুঃখের সমুদ্রে নিমজ্জিত করে। কিন্তু অন্য ভাবে দেখলে এর উপকারী দিক টাও দেখা যায়। কারণ যখনই নিঃসঙ্গতা অনুভব করি তখনই নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করি যা অন্যসময় আমরা ভাবি না।

ব্যস্ত জীবনের কোলাহলে আমরা নিজেদের মনের কথা শুনতে পাই না। আর ঠিক তখনই নিঃসঙ্গতা আমাদের সবাইকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে। অবসাদের অতল গভীরে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। 'আমি একা', 'আমার কেউ নেই' - এইসব কথাগুলো কেউ যেন আমাদের কানে কানে এসে সর্বদা বলে যাচ্ছে। এভাবে চলতে চলতে আমরা যেন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি।

মানুষ এখন সবাই ব্যস্ত, সারাক্ষণ ছুটছে। তার নিজেকে দেবার মতোই সময় নেই তো অন্যকে কি সময় দেবে। যতক্ষণ অন্যদের সাথে আছি হইহুল্লোড় করে আনন্দ করে কাটাচ্ছি; যেই একা থাকছি নিঃসঙ্গতা অনুভব করছি। তাই সবাই আমরা নিঃসঙ্গ জীবনই কাটাচ্ছি। এইসব আনন্দ, হুল্লোড় সবকিছুই বহির্মুখী ব্যাপার। এরা ক্ষনিকের অতিথি; কিছুক্ষণের জন্য আসে, আনন্দ দেয়, তারপর চলে যায়; হৃদয় স্পর্শ করে না। সবকিছু যেন কেমন লোক দেখানো প্রতিযোগিতার অঙ্গ হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। হৃদয় তাকে অনুভব করল কি না বা হৃদয় আনন্দ পেলো কি না তাতে আমাদের কারও কিছু এসে যায় না, তা নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই। আমরা সেই ক্ষনিকের বহির্মুখী আনন্দে মশগুল। তাই যেই সেটা অনুপস্থিত হচ্ছে এক গভীর শূণ্যতা আমাদের গ্রাস করে নিচ্ছে। আমরা অবসাদে ভুগতে শুরু করছি। 

নিঃসঙ্গতা প্রকৃত অর্থে ভালো লাগার বস্তু নয়। কিন্তু যারা কোন সাধনা করছেন তা সে শিক্ষা সম্পর্কিত বা আধ্যাত্মিক বিষয় যাই হোক তাদের নিঃসঙ্গতা ভালো লাগে কারণ তাতে তাদের উন্নতি হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষদের জন্য এটা মোটেই সুখপ্রদ হয় না। ডাক্তাররাও একা থাকতে বারণ করেন, সবার সঙ্গে মেলামেশা করতে বলেন। আর সত্যিই যদি কেউ নিঃসঙ্গ থাকেন তবে তাকে সেই একাকিত্ব কাটানোর রাস্তা খুঁজে বার করতে হবে। তিনি বই পড়ে, ছবি এঁকে, গান করে বা লেখালেখি করে বিভিন্ন উপায়ে নিজের সময় কাটাতে পারেন। তার পছন্দের কাজ করে নিজের সুপ্ত ইচ্ছেগুলি পূরণ করতে পারেন, নিজেরা হারিয়ে যাওয়া গুনাবলীর পুনরায় বিকাশ ঘটিয়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারেন।রাস্তা অনেক আছে কিন্তু সেটা খুঁজে বার করতে হবে।

তবে কোথাও কি এই শূণ্যতা, এই অবসাদের জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী নই? আমরা আনন্দ কে বাইরে খুঁজে বেড়াচ্ছি। অথচ ভালো করে অনুভব করলে দেখবো আমাদের অন্তরেই এক বিশাল রত্নভান্ডার আছে যাকে আমরা খোঁজ করার চেষ্টা কখনও করি না। তার জন্য মনকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্তরমুখী করতে হবে যাতে সে নিজেকে ভালোবেসে তাকে সময় দেয়। মন যেখানে উঁকি দিলে দেখা যাবে অনন্ত এক ভান্ডার আবিষ্কারের জন্য তার আবিষ্কারকের অপেক্ষায় দিন গুনছে। আর তাকে পেতে গেলে সেই পথের দিকে নির্ভীক চিত্তে এগোতে হবে, নিজেকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। নিজের মনের গভীরে ডুব দিতে হবে, ওপরে সাঁতার কাটলে তো হবে না।


ঋতুপর্ণা বসাক

2 comments:

  1. Onekdin pore abar apnar blog pore khoob bhalo laglo Maam.Sotti amra shobsomoy externally happiness khuje berai othocho ashol anonder alo,jogoter alo shobkichu amader antore lukhiye ache,amra seta upolodhi korte pari na,sei power & inner vision amader nei.Mon er gobhire dub na dile ashol anonder r shantir Malik ke khuje pawa osombhob.Ontore supto bhabei tini biraj korchen

    ReplyDelete

শ্রোতা ও বক্তা

  শ্রোতা ও বক্তা শব্দ দুটো নিজেরাই নামের মধ্যে নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়। একজন বলে একজন শোনে। যে বলে সে বক্তা, আর যে শোনে সে ...

Popular Posts