"হে পার্থসারথি! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য"...শাঁখের আওয়াজ এক অনুভূতি, এক শিহরণ যা শরীরের ও মনের প্রতিটি রন্ধ্রে প্রবেশ করে তাদের উজ্জীবিত করে তোলে। মন ও শরীরকে পুনরায় সজীব করে জীবনযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে, তাদের শক্তি জোগায় এই শঙ্খ ধ্বনি। মহাভারতে যুদ্ধের প্রথম দামামা 'পাঞ্চজন্য' দিয়ে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বাজিয়েছিলেন। তারপর অর্জুন তাঁর 'দেবদত্ত' বাজিয়ে যুদ্ধে প্রস্তুতের বার্তা দিয়েছিলেন।
শঙ্খ ধ্বনি সবসময়ই এক বার্তা বাহকের কাজ করে। যখন সন্ধ্যা নামে গ্রামের কৃষক রাখালরা শঙ্খর আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে যে এবার ঘরে ফিরতে হবে। বিভিন্ন ঘর থেকে বিভিন্ন শাঁখের আওয়াজ তার ঘরের মানুষকে ঘরে ফেরার ডাক দেয়। যেন সে বলে "অনেক বাইরের কাজ হল, এবার বিশ্রাম নেবার পালা, প্রিয় মানুষদের সাথে সময় কাটানোর পালা। এবার ঘরে চল, সেখানে তোমার প্রিয়জনেরা তোমার অপেক্ষা করছে।" এই শঙ্খ ধ্বনি বাইরের মানুষগুলোকে জানান দেয় যে বাড়িতে তাদের কেউ আপনজন আছে যারা অধীর আগ্রহে তাদের পথ চেয়ে বসে আছে। পাহাড়ে কোনো বিপদ হলে এই শাঁখ বাজিয়ে একে অপরকে জানান দেয় এবং একে অপরের সাহায্যে ছুটে যায়।
সমুদ্র গর্ভে জন্মের ফলস্বরূপ এই শাঁখ সমুদ্রের সব অজানা রহস্যের সাক্ষী। সমুদ্রের নীরবতা যা অন্যরা বুঝতে পারে না তার সাথে এ ফিসফিস করে করে কথা বলে। শাঁখের প্রতিটি অংশই এতো গুরুত্বপূর্ণ যে প্রয়োজনে তাকে গুঁড়ো করেও কাজে লাগানো হয়, যা সে জগতের কল্যাণের জন্য নীরবে মেনে নেয়। শাঁখের এই গুরুত্ব উপলব্ধি করে তাকে রক্ষার দায় এই মানবজাতির। সমুদ্রকে রক্ষা করে তার আশ্রিতদের রক্ষার গুরুদায়িত্ব আমাদের ওপর যা আমাদের নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে; নতুবা আমরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের জন্য চিরকাল দায়ী থাকবো।
সূর্যাস্তের সাথে সাথে সমস্ত জীবাণুদের প্রকোপ বাড়ে। বলা হয় সন্ধ্যের শাঁখের আওয়াজ সূক্ষ থেকে সুক্ষতর সূক্ষতর জীবাণু বিনাশ করে। এই আওয়াজের কম্পনের তীব্রতায় চারপাশে এক পজিটিভ শক্তির সৃষ্টি হয় যা জীবজগতের হিতার্থে ব্যবহৃত হয়। এই শঙ্খ ধ্বনি যেন আমাদের অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে এই মঙ্গল ধ্বনি সমস্ত নেগেটিভ শক্তি, তেজকে নষ্ট করে পজিটিভ শক্তির বিকাশ ঘটায় যাতে সব অনুষ্ঠান সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে পূর্ণ হয়ে সকলের জীবনে মঙ্গল নিয়ে আসে। তাই শঙ্খ মানুষের জীবনে এক পরম বন্ধুর মতো রয়েছে যে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে কখনও আপনজনকে ঘরে ফিরিয়ে, কখনও মঙ্গল বয়ে এনে তাদের শুধু উপহার প্রদান করে।
ঋতুপর্ণা বসাক