"ভালো আছি" কথাটা আমরা সবসময় খুব সহজে বলতে পারি না, কোথাও একটা দ্বন্দ্ব কাজ করে। সে জায়গায় বরং 'চলে যাচ্ছে' কথাটা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দে বলে দিই। আসলে ভালো থাকাটা কোথাও যেন অনেক শর্তের সাথে জড়িত। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন দিক বিচার করে ভালো থাকার সংজ্ঞা দেওয়া হয়। আর এই শর্তগুলি প্রত্যেক মানুষের কাছে আলাদা ভাবে প্রাধান্য পায়। কারও কাছে শারীরিক ভাবে ভালো থাকা খুব দরকার, আবার কারও কাছে অর্থনৈতিক ভালো থাকাটা সবচেয়ে জরুরী। তাই কে কিসে ভালো আছে সেটা সেই মানুষটাই বলতে পারবে। একজন যে শর্তে ভালো থাকবে অন্যজনও সেই একই শর্তে ভালো থাকবে এমনটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। ভালো থাকাটা মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ভালো থাকা অনেকটা মানসিকতার ওপরও নির্ভরশীল। কারও সব থাকা সত্ত্বেও সে মনে করে যে সে ভালো নেই, আবার কারও কিছু না থাকা সত্ত্বেও সে মনে করে সে খুব ভালো আছে। মানুষ সবসময় অন্যের কি আছে আর নিজের কি নেই সেটা দেখে ভালো থাকা খারাপ থাকা বিচার করতে ব্যস্ত। তার কাছে কি আছে আর অন্যের কাছে কি নেই সেটা কখনও বিচার করে না। সে এটা কখনোই ভাবে না যে সে আজ যা পেয়েছে বা যেখানে পৌঁছাতে পেরেছে সেটা এখনও লক্ষ মানুষের স্বপ্ন যা পাওয়ার জন্য তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মানুষ চাহিদা আর প্রয়োজন এই দুটোর মধ্যে গুলিয়ে ফেলছে। 'অন্যের আছে আমার নেই' এই তুলনা থেকে চাহিদা বাড়ছে এবং মানুষ এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নেমে পড়েছে। প্রয়োজনটাকে যদি প্রাধান্য দিয়ে সেটাকে সীমাবদ্ধ করা যায় তাহলে ভালো থাকাটা হাতের মুঠোয়। কিন্তু যদি চাহিদার পেছনে ছোটে তাহলে কোনোদিনও ভালো থাকতে পারবে না কারণ 'আরও চাই' এই ইচ্ছেটা তাকে সারাজীবন ছুটিয়ে বেড়াবে, শান্তি দেবে না।
মানুষ যদি একে অপরের সাথে নিজেকে বড় দেখানোর প্রতিযোগিতায় না নেমে একে অপরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে, একে অপরের সঙ্গে সুখ দুঃখে অংশীদার হয় তবে ভালো থাকাটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। যত একে অপরের সঙ্গে মনের কথা বলবে, বিপদে আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়াবে তত তার লোকবল বাড়বে, বন্ধু বাড়বে, শুভাকাঙ্খী হবে এবং সে মানসিক ভাবে ভালো থাকবে যেটা জীবনে সবচেয়ে বেশি দরকার। যত মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তত মানুষ সব দিক দিয়ে ভালো থাকবে এবং তার জন্য মানুষকে চাহিদা আর প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্যটা ভালো করে বুঝতে হবে। কথায় বলে,
"জীবনকে প্রয়োজনের মতো বাঁচতে হয়, চাহিদার মতো নয়।
কারণ প্রয়োজন ভিখারীরও পূরণ হয়ে যায় আর চাহিদা বাদশারও অপূর্ণ থেকে যায়।"
ঋতুপর্ণা বসাক