চেনা অচেনা শব্দ দুটির পুঁথিগত অর্থের সঙ্গে অন্তর্নিহিত অর্থের সংগতি বা অসংগতি সময়, পরিবেশ এবং ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভরশীল। চেনা শব্দের মধ্যে কাছের, নিজের এই ভাবনা গুলো প্রথমে মনে হয়; আবার অচেনা বলতে সাধারণত দূরের, অপরিচিত এই ভাবনাগুলো মনে আসে। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে কি সত্যিই তাই হয় সবসময়?
চেনা মানুষ গুলো হঠাৎ করে যেন ভীষণ অচেনা হয়ে ওঠে। তাদের অচেনা রূপটা এতটাই বিস্মকর এবং ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে তাকে সামলাতে জীবনের কিছুটা সময় কখন যে পার হয়ে যায় তা বোঝা যায় না। কাছের সম্পর্ক গুলো যেন হটাৎ করেই হারিয়ে যায়, আর তার সঙ্গে যুক্ত আবেগগুলোও আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যায়। যে চেনা মুখগুলো দিনের আলোতে স্পষ্ট ছিলো সেগুলো রাতের অন্ধকারে ঢেকে যায়।
আবার কোনো মুহূর্তে হঠাৎ করে কোনো অচেনা মুখ এসে নতুন সম্পর্কে সুন্দর ভাবে এমন করে বেঁধে ফেলে যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো ইচ্ছাই থাকে না। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে অচেনা কেউ যখন পাশে এসে দাঁড়ায় তখন যেন জীবনের প্রতি বিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হয়। যে অচেনা মুখ কুয়াশার অন্ধকারে অজ্ঞাত ছিলো সে যেন সূর্যের আলোর মতো উদ্ভাসিত হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় এবং নতুন আশার আলো দেখায়।
চেনা মানুষগুলো যখন অনেক দূরে সরে যায়, বা অচেনা মানুষগুলো কাছে চলে আসে, তখন আর চেনা অচেনার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। এই চেনা অচেনার মুখোশের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই আমাদের জীবনের পথে অভিজ্ঞ করে তোলে, আর সেই মুখোশের আড়ালে থাকা প্রকৃত চেনা অচেনা বন্ধু বা শত্রুর প্রকৃত স্বরূপ চিনতে সাহায্য করে যা আমাদের ভবিষ্যৎ পথের পাথেয়।
চেনা মানুষের দেওয়া আঘাত আর অচেনা মানুষের থেকে পাওয়া উপহার দুটোই আমাদের কাছে সমপরিমান বিস্ময়, আমাদের নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচয় করায়। চেনা অচেনার এই ভীড়ে প্রকৃত চেনা অচেনাকে চিহ্নিত করা একটা গুরুদায়িত্ব হয়ে যায়। চেনা থেকে অচেনা বা অচেনা থেকে চেনা এই মাঝের রাস্তাটুকুই আসল প্রাপ্তি, পরম শিক্ষা। সব চেনা বা সব অচেনা এটা হয় না; কিছু চেনা কিছু অচেনা এই নিয়েই জীবন, এই নিয়েই জগৎ।
ঋতুপর্ণা বসাক