Thursday, December 7, 2023

চেনা অচেনা

 

চেনা অচেনা শব্দ দুটির পুঁথিগত অর্থের সঙ্গে অন্তর্নিহিত অর্থের সংগতি বা অসংগতি সময়, পরিবেশ এবং ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভরশীল। চেনা শব্দের মধ্যে কাছের, নিজের এই ভাবনা গুলো প্রথমে মনে হয়; আবার অচেনা বলতে সাধারণত দূরের, অপরিচিত এই ভাবনাগুলো মনে আসে। কিন্তু প্রকৃতঅর্থে কি সত্যিই তাই হয় সবসময়?

চেনা মানুষ গুলো হঠাৎ করে যেন ভীষণ অচেনা হয়ে ওঠে। তাদের অচেনা রূপটা এতটাই বিস্মকর এবং ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে তাকে সামলাতে জীবনের কিছুটা সময় কখন যে পার হয়ে যায় তা বোঝা যায় না। কাছের সম্পর্ক গুলো যেন হটাৎ করেই হারিয়ে যায়, আর তার সঙ্গে যুক্ত আবেগগুলোও আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে যায়। যে চেনা মুখগুলো দিনের আলোতে স্পষ্ট ছিলো সেগুলো রাতের অন্ধকারে ঢেকে যায়।

আবার কোনো মুহূর্তে হঠাৎ করে কোনো অচেনা মুখ এসে নতুন সম্পর্কে সুন্দর ভাবে এমন করে বেঁধে ফেলে যেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো ইচ্ছাই থাকে না। কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে অচেনা কেউ যখন পাশে এসে দাঁড়ায় তখন যেন জীবনের প্রতি বিশ্বাসটা আরও দৃঢ় হয়। যে অচেনা মুখ কুয়াশার অন্ধকারে অজ্ঞাত ছিলো সে যেন সূর্যের আলোর মতো উদ্ভাসিত হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় এবং নতুন আশার আলো দেখায়।

চেনা মানুষগুলো যখন অনেক দূরে সরে যায়, বা অচেনা মানুষগুলো কাছে চলে আসে, তখন আর চেনা অচেনার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না। এই চেনা অচেনার মুখোশের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই আমাদের জীবনের পথে অভিজ্ঞ করে তোলে, আর সেই মুখোশের আড়ালে থাকা প্রকৃত চেনা অচেনা বন্ধু বা শত্রুর প্রকৃত স্বরূপ চিনতে সাহায্য করে যা আমাদের ভবিষ্যৎ পথের পাথেয়।

চেনা মানুষের দেওয়া আঘাত আর অচেনা মানুষের থেকে পাওয়া উপহার দুটোই আমাদের কাছে সমপরিমান বিস্ময়, আমাদের নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচয় করায়। চেনা অচেনার এই ভীড়ে প্রকৃত চেনা অচেনাকে চিহ্নিত করা একটা গুরুদায়িত্ব হয়ে যায়। চেনা থেকে অচেনা বা অচেনা থেকে চেনা এই মাঝের রাস্তাটুকুই আসল প্রাপ্তি, পরম শিক্ষা। সব চেনা বা সব অচেনা এটা হয় না; কিছু চেনা কিছু অচেনা এই নিয়েই জীবন, এই নিয়েই জগৎ।


ঋতুপর্ণা বসাক

Sunday, October 8, 2023

স্মৃতি কথা

 


স্মৃতি বড়ই অদ্ভুত এক ব্যাপার, কখনও হাসায় আবার কখনও কাঁদায়। প্রতি ক্ষণে একটা করে স্মৃতি তৈরী হচ্ছে হয় ভালো, না হয় খারাপ। আজকের মুহূর্ত কাল স্মৃতি হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা কোন বিশেষ মুহূর্তের স্মৃতির অভাব বোধ করি, তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নয়; কারণ সম্পর্ক পাল্টে যায়, কিন্তু স্মৃতি পাল্টান যায় না; সেই মুহুর্তের স্মৃতি হয়তো আমাদের কোন এক অনাবিল আনন্দ দেয় যা বর্তমানে আমাদের বেঁচে থাকার রসদ জোগায়।

স্মৃতি আমাদের মনে করায় যে কোনোকিছুই স্থায়ী নয়; এখন যে খুশী পরে সে দুঃখীও হতে পারে। সময় খুব মূল্যবান, সে তার গতিতে এগিয়ে চলে। তাই প্রতি মুহূর্তকে উপভোগ করে বাঁচতে হয় যাতে তার একটা সুন্দর  স্মৃতি আমাদের মনে তৈরী হয়। কাছের মানুষ দূরে চলে গেলে সময়ই আমাদের তাঁদের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শেখায়। অতীতের স্মৃতি বর্তমান এবং ভবিষ্যৎকে নতুন রাস্তা দেখায় কারণ অতীতের স্মৃতি থেকে আমরা ঠিক বা ভুলগুলোকে বিশ্লেষণ করে এগিয়ে চলি।

অনেকসময় অতীতের পুরোনো স্মৃতি চোখের সামনে আসতেই মনের ভেতর উথালপাথাল করে ওঠে, দুকূল ছাপিয়ে চোখের বারিধারা নেমে আসে যাকে চেয়েও আটকানো যায় না। আবার কখনও অনেক সুন্দর মুহুর্তের স্মৃতি মনে পড়তেই বুকের ভেতর আনন্দের ঢেউ খেলে যায়, মুখের মধ্যে এক অমলিন, অনাবিল হাসি দেখা দেয়। তাই স্মৃতি আমাদের খুব কাছের কেউ যাকে ছাড়া আমরা ভাবতেই পারি না, যে প্রতি মুহূর্তে আমাদের সঙ্গেই আছে।

স্মৃতি যত পুরোনো হয় তত তার দাম বাড়ে কারণ প্রতিটা স্মৃতি কোন যুগের, কোন সময়ের, কোন মুহুর্তের একটা নতুন অজানা গল্প শোনায়। স্মৃতির পাতা ওল্টালে সেই গল্প গুলোই আমরা দেখতে পাই যা হয়তো কিছু জানা কিছুটা অজানা, খানিকটা নিজের খানিক অন্যের। স্মৃতির এমনই বিশেষত্ব যাকে সময়ও মুছে ফেলতে পারে না। 


মানুষ হারিয়ে যায়, স্মৃতি রয়ে যায়।

মুহূর্ত চলে যায়, স্মৃতি থেকে যায়।।


ঋতুপর্ণা বসাক

Thursday, August 31, 2023

অভিযোগ

 


অভিযোগ এমন একটা শব্দ যার ব্যবহারের কোন সীমা পরিসীমা নেই। এটা একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে । চারপাশের পরিবেশের প্রতিটি কোনায় অভিযোগের উপস্থিতি বিদ্যমান। আমরা প্রত্যেকে কোন না কোন কিছু নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করে চলেছি। যা আছে তা নিয়ে কোন কৃতজ্ঞতা বা ধন্যবাদ না দিয়ে যা নেই তাই নিয়ে সর্বক্ষণ অভিযোগ করে চলেছি। আমরা ভুলে যাই যা আমাদের আছে তা বহু মানুষের কাছে এখনও স্বপ্ন। কিন্তু আমরা সেই অনুভূতিটাই হারিয়ে ফেলেছি, যেন তার কোন অস্তিত্বই নেই। কি নেই, কি পাইনি, অন্যের কি আছে আর আমার কি নেই তাই নিয়ে শুধু অভিযোগ করে চলেছি।

অভিযোগ আমাদের কাছে একটা অসুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নিজেকে রুগী বানানোর একটা মাধ্যম। আমার কাছে কি নেই, আমি কত কষ্টে আছি বা আমাকে কত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে এই বলে আমরা নিজেদের প্রতিনিয়ত নিগ্রহ করে সকলের সমবেদনা পাওয়ার খেলায় যেন মেতে উঠেছি। আচ্ছা, আমরা কি কখনো ভালো করে তাকিয়ে দেখেছি আমাদের কাছে কি আছে, কত অমূল্য ধনসম্পদ দিয়ে জীবন পরিপূর্ণ, তা নিয়ে কি খুশি হওয়ার চেষ্টা করেছি? আরও উন্নতি করার চেষ্টা অবশ্যই করা উচিৎ কিন্তু বর্তমান সম্পদকে অগ্রাহ্য করে নয়, তাকে শক্তি করে অগ্রসর হওয়া দরকার।

আমরা শুধু অভিযোগ করতে ওস্তাদ কিন্তু নিজেদের সম্পর্কে অভিযোগ শুনতে নারাজ। আমরা আবার নিজেদের খুব মহান ভাবি কি না! এমন একজন মহান মানুষ যে কোন ভুল করতে পারে না, তাই কোন অভিযোগও থাকতে পারে না। আমাদের অবস্থা হয়েছে কোন কিছু ভালো হলে আমিযোগ অর্থাৎ সব কৃতিত্ব আমার, আর না হলেই অভিযোগ অর্থাৎ সবার হয় শুধু আমারই হয়না। কি দারুণ ব্যাপার না! অভিযোগ নিয়ে আমরা এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ছি যে জীবনের আনন্দগুলোকে আমরা অগ্রাহ্য করে চলেছি, তাদের অনুভব করতেই পারছিনা।

অভিযোগ যত বেশি হবে চারপাশে সমস্যা তত বাড়বে। সারাক্ষণ শুধু কি নেই এই নিয়ে যদি অভিযোগ করে যাই তবে চারপাশের সম্পর্কেও এর প্রভাব পড়বে; মানুষজন বিরক্ত হবে এবং এড়িয়ে যাবে। তাই যেতে মুহূর্তে আমরা অভিযোগ করা বন্ধ করে দেব সেই মুহূর্ত থেকে জীবনের আনন্দকে উপলব্ধি করতে পারব এবং অনুভব করতে পারব যে আমাদের কি আছে এবং কোন সমস্যা আমাদের নেই যা আমাদের জীবনকে আরও দুর্বিসহ করে তুলতে পারতো।

যে শক্তি এবং সময় আমরা অভিযোগ করতে ব্যয় করি, সেই শক্তি এবং সময় আমরা যদি পরিস্থিতি বদলাতে কাজে লাগাই তবে চিত্রটা হয়তো অন্যরকম হতে পারে। আর সেই প্রচেষ্টায় "I am not the victim, I am the warrior" এই গঠনমূলক ভাবনাকে অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগাই তবে অভিযোগের মতো ধ্বংসমূলক অসুখ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সক্ষম হব।


ঋতুপর্ণা বসাক


Sunday, July 30, 2023

ক্ষমার ক্ষমতা

 


ক্ষমা একটা ছোট্ট শব্দ কিন্তু একটা জাদুশক্তি, একটা মন্ত্রবল যা অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান করে দেয়। কিন্তু সহজে পাওয়ার মতো সহজলভ্য সে একেবারেই নয়। ক্ষমা একটা গুণ যা সবার মধ্যে কম বেশি মাত্রায় থাকে। কেউ সহজে ক্ষমা করতে পারে, কেউ পারে না।

দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেকে নিজের যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে, কখনও কষ্ট পাচ্ছে বা কখনও কষ্ট দিচ্ছে, এটা সবার সাথেই হচ্ছে। হয়তো সবসময় সবকিছু সবার হাতে থাকে না। সজ্ঞানে বা অজান্তে, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে এটা ঘটছে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের এই ঘটনাগুলির পরমক্ষণ হল যে আঘাতের বা কষ্টের পর কতজন ক্ষমা চাইছে আর কতজন ক্ষমা করছে - এটা উভপক্ষের যৌথক্রিয়া। মানবিকতা বজায়ের জন্য উভয়ের সমান মিলিত প্রয়াস।

ক্ষমা মানেই সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাকে ভুলে যাওয়া নয়। আঘাত ঠিক হয়ে যাওয়া মানে আঘাত ছিল না তা কিন্তু নয়; বরং সেই কষ্টটাকে নতুন ভাবে মনে করা। সেই কষ্ট থেকে আমরা কি কি শিক্ষা লাভ করেছি যা ভবিষ্যতের পাথেয় সেগুলি চিন্তা করে কষ্টটাকে মনে করা। একটা নেগেটিভ অভিজ্ঞতাকে পজিটিভ ভাবে ভাবতে শেখায় ক্ষমা। ক্ষমা অতীত কে বদলাতে পারে না কিন্তু ভবিষ্যৎ, তাকে অবশ্যই পাল্টাতে পারে। অতীতের ব্যর্থ হতাশাকে ভবিষতের এক নতুন আশায় পরিণত করে ক্ষমা।

ক্ষমা একটা যাত্রা, একটা অভিজ্ঞতা যা একজনকে অপরিণত থেকে পরিণত মানুষে রূপান্তরিত করে। কিন্তু এটা কোন সহজ যাত্রা নয়; মনের সাথে, বিবেকের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে এই যাত্রা একজনকে সেই গন্তব্যে পৌঁছে দেয় যে জায়গা থেকে একজন আরেজনকে ক্ষমা করে আর সেই অভিজ্ঞতা হয় পরম সুখকর কারণ সেটা তাকে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দেয়। তাই জন্যই বলে "ক্ষমাহি পরম ধর্ম"

ক্ষমা এক বিচিত্র জিনিষ যা ব্যক্তি বিশেষের ওপর নির্ভরশীল। অনেকসময় কাছের মানুষদের থেকে পাওয়া আঘাত ভুলতে কষ্ট হয় এবং ক্ষমা করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অজানা অচেনা ব্যক্তিদের ক্ষমা করা সহজ হয় কারণ তারা অপরিচিত, তাই তাদের থেকে কোন প্রত্যাশাও থাকে না। কিন্তু কাছের মানুষদের থেকে অনেক প্রত্যাশা থাকে, তারা অনেক সুখদুঃখের সাথী হয়। তাই তাদের থেকে প্রাপ্ত আঘাত সহ্য করা যায় না, মনের মধ্যে দাগ কেটে যায়, তাই ক্ষমাও সহজে আসে না। 

William Blake এর উক্তিতে "It is easier to forgive an enemy than to forgive a friend."

পরিশেষে এটাই বলা যে, নিজেকে তিক্ত অতীতে বেঁধে রাখতে না চাইলে এবং এক নতুন ভবিষতের দিকে এগোতে চাইলে ক্ষমা করতে শেখা ভালো কারণ সবার আগে আমরা নিজেকে ভালোবাসি; তাই অন্য কারও জন্য নয়, নিজের মঙ্গলের জন্য, নিজের সুস্থ থাকার জন্য এটা করা

"Forgive others, not because they deserve forgiveness, but because you deserve peace."

                                                                                                                  ----Jonathan Lockwood Huie


ঋতুপর্ণা বসাক



Sunday, June 11, 2023

দেওয়া নেওয়া

 


দেওয়া নেওয়া শব্দ দুটোর মধ্যে একটা সূক্ষ আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে যা আজকাল এক স্থুল ব্যবসায়িক সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। কেউ কাউকে কিছু দিয়েই তার পরিবর্তে কিছু নেওয়ার কামনা করে, যেন এটা তার প্রাপ্য তার অধিকার। কিছু না নিয়ে শুধু দেওয়া যেন একপ্রকার বিলাসিতা, কল্পনা মাত্র। দেওয়া নেওয়া বর্তমান সমাজের এক কঠিন বাস্তব চিত্র।

কখনও কখনও প্রয়োজনে একজন আরেকজনের কাছ থেকে সাহায্য নেয় সেটা অর্থই হোক বা অন্য কিছু। কিন্তু বর্তমানে কাউকে কিছু দেওয়া মানেই তার ওপর একটা অঘোষিত, অলিখিত অধিকার দেখানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়ে যায়। যদি কখনও সেই সাহায্য সেই ব্যক্তি পরিশোধ করেও দেয় তাহলেও কোন এক সময় সে সাহায্য পেয়েছে এই মানসিকতায় তার ওপর অধিকার খাটানোর একটা প্রচেষ্টা থেকেই যায়।

একটা সম্পর্ক দেওয়া নেওয়ার মধ্যে একটা ভারসাম্য। একদিকে শুধুই নেওয়া আর কোন দেওয়া নেই তাহলে সেই সম্পর্ক আর বজায় থাকে না। উভয় পক্ষের দেওয়া নেওয়ার মিলিত প্রচেষ্টা একটা সুষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে, সুন্দর ভাবে বজায় রাখে। সমপরিমাণ দেওয়া নেওয়া প্রয়োজনীয় নয় কিন্তু মানসিকতা আবশ্যক । শুধুই নেওয়া আর কোন দেওয়া নয় এটা একান্ত ভাবেই কাম্য নয়।

জীবন পুরোটাই এই দেওয়া নেওয়া সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তৈরী কারণ সবাই পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। যদি কেউ কোন কিছু দিতে অনাগ্রহী থাকে তবে তার কোন কিছু নিতেও আগ্রহী হওয়া উচিৎ নয়। আবার কেউ যদি শুধুই দিয়ে যায় সেই ক্ষেত্রেও দাতার সীমাজ্ঞান থাকা আবশ্যক কারণ অনেকসময় গ্রহীতার সেটা থাকে না, সে শুধু নিতে ব্যস্ত থাকে।

অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ার মধ্যে একটা পাওয়ার আশা থেকে যায় যেটা তার দেওয়ার মানসিকতাকে কলুষিত করে। তাই কাউকে স্বেচ্ছায় কিছু দিলে এটা মনে করে দেওয়া উচিৎ সেটা আর কখনও ফেরত পাবে না। দরকার হলে অল্প দেওয়া ভালো বা সেরকম হলে না দেওয়া। কিন্তু দিলে পাওয়ার আশা কোনও ভাবেই উচিৎ নয় আর নিলে সেটা সবসময় মনে রাখা উচিৎ। তাহলেই সম্পর্ক ভালো থাকবে। তাই, Brian Tracy র উক্তিতে...

Always give without remembering 

& Always receive without forgetting.


ঋতুপর্ণা বসাক

Friday, May 5, 2023

যাত্রা

 


জীবন মানেই যাত্রা যার মধ্যে অনেক ছোট বড় যাত্রা পূরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। বিভিন্ন যাত্রায় আমরা বিভিন্ন মানুষের সাথে পরিচিত হই, অনেক ঘটনার সম্মুখীন হই যা আমাদের মধ্যে নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করে। ভালো খারাপ সব রকমের অভিজ্ঞতাই আমরা লাভ করি যা আমাদের নতুন যাত্রার জন্য তৈরী করে। 

এক যাত্রা শেষ হলে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন যাত্রার উদ্যোগ শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন যাত্রায় নতুন নতুন রহস্য উন্মোচন, বিপদ আপদ জয় করে সুন্দর ফল প্রাপ্তি যাত্রীকে এক নতুন দিশা দেখায়, তাকে আরও পরিণত মানুষে রূপান্তরিত করে। যদি যাত্রার আগেই সব প্রতিকূলতা সম্পর্কে জানা যেত তবে হয়তো কেউ কোনোদিন কোনও যাত্রা শুরুই করতো না, আর জীবনের অনেক প্রাপ্তি অপ্রাপ্ত রয়ে যেত।

যাত্রা সবসময় সুখকর হয় না। এটা সবসময় আরামদায়ক হয় না। যাত্রা আমাদের মধ্যেকার মানুষকে পরিবর্তন করে, পরিণত করে যা অবশ্যম্ভাবী। যদি যাত্রার জন্য কোন পরিবর্তন না হয়, কোন নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার না হয় তবেই সেটা যাত্রাই নয়। সবচেয়ে কঠিন যাত্রা হল সেটা যেটা আমরা কখনও শুরু করিনি।

প্রত্যেকের নিজস্ব যাত্রা আছে এবং তাকেই সেটা পূর্ণ করতে হয়। প্রত্যেক যাত্রীর যেমন নিজস্ব যাত্রা আছে ঠিক তেমন প্রত্যেক যাত্রার নিজস্ব যাত্রী আছে। অন্যরা তার সঙ্গে সেই যাত্রায় সহযাত্রী হতে পারে কিন্তু যাত্রী নয়।  সেই যাত্রায় পথ চেনা, দিক নির্ণয়, বিপদের মোকাবিলা করা, নিজেকে রক্ষা করা সব তাকেই করতে হয়। তার যাত্রা তাকেই পূরণ করতে হবে, তার হয়ে অন্য কেউ নয়।

কখনও কখনও না হারালে এক সুন্দর যাত্রাপথ আবিষ্কার করা যায় না। একটা যাত্রা শেষ হলে আর একটা যাত্রা শুরু হয়। অনেক সময় যাকে শেষ ধরা হল দেখা গেল সেটা শেষ হয়নি, আরও অনেকটা চলা বাকী। সফর শেষ ভেবে যেখানে এক বিরাম চিহ্ন বসান হল, কিছু সময় বাদে বোঝা গেল চিহ্ন হিসাবে কমা (,) বসেছে যা ক্ষনিকের বিরতি মাত্র; দাঁড়ি (।) বসতে অনেকটা পথ বাকী যেটা এখনও পেরোতে হবে। তাই গীতিকারের গানে....


ও আলোর পথযাত্রী, এযে রাত্রি, এখানে থেমো না,

এ বালুচরে আশার তরণী তোমার যেন বেঁধো না।


ঋতুপর্ণা বসাক

Monday, April 3, 2023

সমুদ্র মন্থন

 


দেব দানবের মন্থনের ফলস্বরূপ সমুদ্র গর্ভ থেকে জেগে ওঠে মন্দার পর্বত। মাতৃ জঠরে শিশু হলো সেই মন্দার পর্বত যার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে তাকে মন্থন করা শুরু হয়। দেব দানবের মন্থন অর্থাৎ সুপ্রবৃত্তি এবং কুপ্রবৃত্তির মন্থন। যে শিশুকে যেমন ভাবে মন্থন করা হয় তার ভেতরের প্রজ্ঞার বিকাশ সেইভাবে ঘটে।

এই সুপ্রবৃত্তি এবং কুপ্রবৃত্তি বিকাশে ধ্বনির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এই ধ্বনির বিভিন্ন তারতম্য মানবদেহে বিভিন্ন কম্পনের সৃষ্টি করে যা সেখানে অবস্থিত বিভিন্ন চক্রের বৈশিষ্ট্যতা বৃদ্ধি করে। আর এই বৈশিষ্ট্যতাগুলি সেই মানুষের ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে যা তাকে অন্যের থেকে আলাদা করে তোলে। ভালো কথা বা সুধ্বনি যদি বারবার বলা হয় তবে তার সেই কম্পন মানুষের মধ্যে মন্দার পর্বতের অপরের দিকে ধাক্কা মেরে তাকে উন্নত মানুষে পরিণত করে। আবার খারাপ কথা বা কুধ্বনি যদি বেশি উচ্চারিত হয় তবে তা মন্দার পর্বতের নীচের দিকে আঘাত হেনে সেই মানুষকে অবনতির দিকে চালিত করে। 

মন্দার পর্বত মন্থনের সময় অনেক ভালো জিনিষ বেরিয়ে আসে যেমন ঐরাবৎ, কামধেনু; ঠিক তেমন মানুষের ভেতরের মন্দার পর্বতের সুপ্রবৃত্তির যত বেশী মন্থন হবে তত তার ভেতরের প্রজ্ঞার বিকাশ ঘটবে। আর যদিও কুপ্রবৃত্তির প্রভাব বেশী হয় তবে গরল বের হবে। এখন প্রশ্ন হলো সেই গরল কোথায় যায়? পুরাণে সেই গরল ভগবান শিব কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন। কিন্তু এযুগে সেই মহাদেব কোথায়? দেব দানবের অর্থাৎ সুপ্রবৃত্তি এবং কুপ্রবৃত্তির মন্থনে মানুষের ভেতরের গরল কখনো সে নিজে গ্রহণ করছে আবার কখনো অন্য মানুষকে গ্রহণ করতে হচ্ছে হয়তো স্বেচ্ছায় নয়তো অসহায় হয়ে। মহাদেবের মতো কণ্ঠে ধারণ করার ক্ষমতা না থাকার ফলে এই গরল শরীরে, মনে প্রবেশ করে জীবনকে এতোই বিষাক্ত করে তুলছে যে সবাই আর অমৃতের চেষ্টাই করছে না। কিন্তু অমৃত পেতে গেলে যে আরও কঠিন বল প্রয়োগ করতে হবে, নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তবেই অমৃত কলসসহ লক্ষী উঠে আসবে যে আমাদের এক সুন্দর জীবনের দিশা দেখাবে। আর এই লক্ষীলাভ করতে গেলে মন্দার পর্বতকে আরও মন্থন করতে হবে। যতবেশী মন্থন হবে তত বেশী মানুষ তার অন্তর জগৎকে চিনতে শিখবে, বাইরের জগতের বিশ্বরূপের সাথে ভেতরের বিশ্বরূপের মেলবন্ধন ঘটাতে পারবে


ঋতুপর্ণা বসাক

শ্রোতা ও বক্তা

  শ্রোতা ও বক্তা শব্দ দুটো নিজেরাই নামের মধ্যে নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়। একজন বলে একজন শোনে। যে বলে সে বক্তা, আর যে শোনে সে ...

Popular Posts