জনসমাবেশের আরেক নাম হল রেলস্টেশন। অসংখ্য মানুষের মিলনক্ষেত্র হল রেলস্টেশন যেখানে সবার জাতি, ধর্ম, রূপ, রং, চলনবলন সব আলাদা। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ এখানে এসে জড়ো হয়, কেউ যাত্রার উদ্দেশ্যে, কেউ বা যাত্রার অন্তিমে। রেলস্টেশন শুরু এবং শেষের মধ্যেকার সেই স্থান যেখানে সবাই কিছু সময়ের জন্য আশ্রয় নেয়, সারা জীবনের জন্য সংসার সাজায় না। কিছু মুহুর্তের জন্য থামা, তারপরেই যে যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
রেলস্টেশন এক অন্য অনুভূতি, এক অন্য উদ্দীপনা যা হৃদয়কে মাতোয়ারা করে তোলে। অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানার একটা উত্তেজনা সর্বক্ষণ কাজ করে যায়। রেলস্টেশন মানেই আনন্দ তা সে নতুন কোথাও যাওয়া হোক বা পুরোনো জায়গায় ফেরা। আনন্দ তো দুই ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
রেলস্টেশন নতুন শুরুর আনন্দের, উদ্দীপনার প্রতীক। এক নতুন যাত্রার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেওয়া; সঙ্গে থাকে অনেক পরিকল্পনা, অনেক স্বপ্ন যেগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য মনে থাকে দৃঢ় সংকল্প, উদ্দামতা। রেলস্টেশন মানেই হল স্বপ্নকে বাস্তব করে ঘরে ফেরা। এক অভিযান সম্পূর্ণ করে অনেক নতুন সম্পর্ক বানিয়ে অগণিত অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে আসা, সেই অভিযানের বিশ্লেষণ করা এবং আবার এক নতুন অভিযানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।
রেলস্টেশন এমন এক জায়গা যেখানে অচেনা মানুষ কিছু সময়ের জন্য হয়তো চেনা হয়ে ওঠে বা কোন নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যেই স্টেশন ছাড়ল সম্পর্কগুলোও হয়তো ভুলে গেল, আবার অন্য কোন স্টেশনে অন্য কোন নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কিছু সময়ের জন্য কথা আদানপ্রদান, তারপর যে যার গন্তব্যে চলে যাওয়া।
কিছু মানুষের কাছে রেলস্টেশন রুজি রোজগারের জায়গা যেখানে তাদের রোজ যেতে হয় কারণ সেখানে আসা যাত্রীদের থেকেই তাদের উপার্জন হয়। আবার কেউ রেলের কর্মী যারা পুরো সিস্টেমটাকে সুষ্ঠ ভাবে চালায়। তাদের কাছে সেটা ক্ষণিকের আশ্রয়স্থল নয় যেখান থেকে তারা অন্য কোথাও যায় বা যেতে পারে। তাদের কাছে রেলস্টেশন কর্মক্ষেত্র যেখানে প্রতিদিন তাদের হাজিরা দিতে হয়।
সঠিক রেলগাড়ীতে চড়লেই সঠিক রেলস্টেশনে পৌঁছানো যায়। যদি কোন রেলগাড়ী আমাদের স্টেশনে না থামে তবে বুঝতে হবে সেটা সঠিক গাড়ী নয়, তার যাত্রী আলাদা। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য নির্দিষ্ট রেলগাড়ী আছে যা তাকে তার সঠিক রেলস্টেশনে পৌঁছে দেয় যা তার গন্তব্যের পূর্ববর্তী সাময়িক স্থান যেখান থেকে সে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়।
ঋতুপর্ণা বসাক