শ্রোতা ও বক্তা শব্দ দুটো নিজেরাই নামের মধ্যে নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়। একজন বলে একজন শোনে। যে বলে সে বক্তা, আর যে শোনে সে শ্রোতা। বক্তার সর্বদা একজন শ্রোতার প্রয়োজন হয় যার কাছে সে তার মনের সব কথা খুলে বলে। মনের যত রাগ, দুঃখ, অভিমান, ভালো মন্দ সব অভিজ্ঞতা উজাড় করে শ্রোতাকে বলে। আর শ্রোতা ধৈর্য্য ধরে মনোযোগ সহকারে তা শোনে। এটাই প্রকৃত দৃশ্য 'শ্রোতা' ও 'বক্তা' শব্দের ধ্বনিতে মনের মধ্যে ভেসে ওঠে।
অনেক সময় মানুষ এটা ভুলে যায় শ্রোতারও একজন শ্রোতার প্রয়োজন হয়। তারও বক্তা হওয়ার দরকার আছে। সে শুধু সবটা শুনে যাবে আর নিজে কিছু বলবে না এটা হয় না, হতে পারে না। তারও বক্তা হওয়ার ইচ্ছে হয়। নিজের জমানো সব কথা, সুখ দুঃখের গাঁথা অন্যকে সেও প্রকাশ করতে চায়। কোন কিছু প্রকাশ না করে শুধু নিজের মধ্যে জমিয়ে রাখলে সে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। নিজের অভিজ্ঞতা সবার সঙ্গে ভাগ করে না নিলে অন্যরা অনেক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে। তাই নিজের এবং সবার সার্বিক উন্নতির জন্য শ্রোতারও বক্তা হওয়া অত্যন্ত জরুরী।
শ্রোতার যেমন বক্তা হওয়া দরকার ঠিক তেমনি বক্তারও শ্রোতা হওয়া আবশ্যক। সে শুধু বলে যাবে, কিছু শুনবে না তা তো হতে পারে না। তারও অন্যের কথা শোনা দরকার। অন্যের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। বক্তা যা বলছে শুধু সেগুলোই দরকারী, বাকিদের কথা অদরকারী এই মনোভাব পোষণ করলে জীবনে এগোনোর বদলে আরও পিছিয়ে যাবে। সবার কথাই শোনা দরকার আর তার মধ্য থেকে যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে চলতে হয়।
জীবনে শ্রোতা বক্তা উভয়েরই সমান ভূমিকা রয়েছে। ভালো বক্তা হতে গেলে সবার আগে একজন ভালো শ্রোতা হতে হয়। সবার অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান আহোরণ করে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হয় আর তারপর সেটা সবার মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। তবেই একজন ভালো বক্তা হওয়া যায়। শুধু নিজের কথা বললে কেউ শুনবে না, একঘেয়ে লাগবে। কিন্তু যখন সবার কথা বলা হয় তখনই সবাই শোনে, মানে এবং শিক্ষা নেয়।
ঋতুপর্ণা বসাক