জীবন যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা কোন না কোন লড়াই করে চলেছি।প্রতিটা জীব প্রতিটা মুহূর্তে কিছু না কিছুর জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। কখনও বাঁচার জন্য, কখনও খাবারের জন্য, কখনও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, কখনও অধিকারের জন্য, কখনও সম্মানের জন্য, আবার কখনও বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ না কেউ কখনও একক ভাবে তো কখনও সমবেত ভাবে সর্বক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই লড়াইগুলোই আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাফল্যের চাবিকাঠি, কারণ এই লড়াইগুলোই আমাদের এক একটা শিক্ষা দেয়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কখনও কখনও অপ্রত্যাশিত ভাবে আসা বাঁধাগুলো আমাদের এক একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করায়। তখন আমাদের সামনে দুটো পথ খোলা থাকে; হয় আমরা শোকে দুঃখে বিষণ্ণ হয়ে, মুষড়ে পড়ে হার মেনে নিয়ে নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিই নতুবা সেই দুঃখটাকেই শক্তিতে পরিণত করে নিজেদের পুনরায় আবিষ্কার করে আত্ম-উন্নয়নের এক উজ্জ্বল পথে নিজেদের চালনা করি। তাই নিজেদের জন্য ধ্বংস না নির্মাণ কোনটা চাই সেই সিদ্ধান্তটা নিজেদেরই নিতে হয়।
প্রত্যেকেই কোন না কোন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলে । আর তার জন্য দৃঢ় আকাঙ্খা দিয়ে বোনা সেই স্বপ্নের সঙ্গে আপোসহীন থাকতে হয়। প্রতি মুহূর্তে প্রত্যেকেই নিজের ভাগের বরাদ্দ লড়াইটা লড়ে চলেছে। অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অনেক লড়াই করে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়; গন্তব্যের উদ্দেশ্যে এতো সবে শুরু, আরও অনেকটা পথ চলতে হবে। অনেকসময় আমাদের শক্তিটাকেই আমাদের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আমাদের দুর্বল করে দেবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতিগুলোতে দুর্বল হলে চলে না, তাহলে সব শেষ হয়ে যায়। নিজের আত্মসম্মান বোধটাকে অক্ষুন্ন রেখে নিজের লড়াইয়ের ওপর বিশ্বাস রেখে লড়ে যেতে হয়। আর এই লড়াইয়ের পথে চলতে গেলে নিজেকে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিজের লক্ষ্যে অটল থেকে প্রতিটা পদক্ষেপই সবল ভাবে ফেলতে হয় যার শুরুটা প্রথম থেকেই প্রবল ভাবে করতে হয়।
জীবনে চলতে গেলে শঙ্কা, ভয় এসব আসবেই। সব ভয় কাটিয়ে ফেলতে হয়। এই ভয় কাটানোটাও একটা লড়াই। আর এই লড়াইটা যখন নিজের সঙ্গে হয় তখন তাতে হারা যায় না। এই লড়াইটা যদি নিজের কাছের মানুষের সঙ্গে হয় তাতে হেরে গেলেও ক্ষতি নেই। জীবনের সব চাইতে বড় লড়াই কোনটা? নিজেকে নিজে ভালো রাখতে পারাটা। অনেকেই অবলম্বন হিসাবে পাশে থাকলেও দিনের শেষে লড়াইটা কিন্তু আমাদেরই লড়তে হয় কারণ সেটা আমাদের জন্যই বরাদ্দ। আর এই লড়াইটা করতে করতে অনেক বাস্তবতা, অভিজ্ঞতার মুখোমুখি আমাদের অনেক জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায় যা আত্মউন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়কের ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকে নিজের ভাগের লড়াইটা নিজেরাই লড়ে, তার হয়ে অন্য কেউ নয়। তাই নিজেকে নিজেই ভালো রাখতে জানতে হয় কারণ শেষ পর্যন্ত নিজের জন্য শুধু নিজেই থাকে, এটাই নির্মম বাস্তবতা।
নিজেকে ভালো রাখতে নিজের চিন্তা ভাবনার দাসত্ব না মেনে তার ওপর রাজত্ব করা শিখতে হয়। নিজের সঙ্গে নিজেকে সময় কাটাতে হয়, তাকে চেনার চেষ্টা করতে হয়। নিজের প্রচ্ছন্ন প্রতিভাগুলোকে খুঁজে বার করে কাজে লাগাতে হয়। নিজের অপরাজেয় সত্ত্বার সঙ্গে পরিচয় হওয়াটা অত্যন্ত দরকার। নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা করে নিজেকে আরও উন্নত করার লড়াইটা গভীরভাবে কাম্য। জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকেই নিজের প্রেরণা হিসাবে আবিষ্কার করাটাও বিশেষভাবে প্রয়োজন। এটাই পরম প্রাপ্তি হিসাবে জীবনের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে খচিত থাকে।
ঋতুপর্ণা বসাক