Sunday, April 17, 2022

হার - জিত


'হার' বা 'জিত' এই শব্দ দুটো আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত যা প্রতি মুহূর্তে আমাদের প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তি গুলোকে সূক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করে চলেছে। 'আমি হেরে গেছি' বা 'আমি জিতে গেছি' এটা যেমন একটা মানুষের ভাবনাকে বা চিন্তাধারাকে বর্ণনা করে, ঠিক তেমনি তার পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যবস্থার  মানসিকতারও পরিচয় দেয়। প্রত্যেকেই তার সেরাটা দেয়, সবাই জিততে চায়। তাই যখন কেউ হেরে যায় সমাজ যদি তার সেই পরিশ্রমের মূল্যটা দেয় এবং ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতার জন্য উৎসাহ জোগায় তাহলে হার টা আর দুঃখ মনে হয় না, সেটা আর হার থাকে না। তাই একটা জয় বা পরাজয় বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের সাক্ষ্য বহন করে।

মানুষ ছোট থেকেই এই জয় বা পরাজয় ব্যাপারটা খুব ভালো করে শিখে যায়। কোনো শিশু যখন কোন প্রতিযোগিতা জেতে বা পরীক্ষায় ভালো ফল করে তখন চারপাশের সমাজের বাহবা, প্রশংসা তাকে বুঝিয়ে দেয় তার গুরুত্ব কতোটা। আবার যখন সে কোন কিছুতে হেরে যায় বা পরীক্ষায় কম নম্বর পায় বা ফেল করে তখনও চারপাশের মানুষদের তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা তাকে হতাশার সমুদ্রে ঠেলে দেয়। তাকে এটাই বুঝিয়ে দেওয়া হয় যে যতক্ষণ সে জিততে পারবে সবাই তাকে মাথায় করে রাখবে, আর হেরে গেলে হারিয়ে যাবে যার কেউ খোঁজও করবে না। হেরে যাওয়া এক বিশাল অপরাধ  - এই বার্তাই সবার কাছে পৌঁছানো হয়।

মানুষ ভুলে যায় যে একটা প্রতিযোগিতায় একজনই প্রথম হয়, সবাই প্রথম হয় না। তাই কাউকে না কাউকে তো হারতেই হবে। তাহলে তারা কোথায় যাবে? আর যারা জিতলো তারা তো সবসময় নাও জিততে পারে। হেরে গেলে যদি শুধু অবজ্ঞা, অবহেলা মেলে তাহলে জয়ীদের মনেও একটা ভয় কাজ করতে থাকে, একটা মানসিক চাপ মনের মধ্যে গেঁথে বসে। তাতে সমস্যা বাড়ে বই কমে না। হার জিত একটা তাৎক্ষণিক ব্যাপার, কিন্তু সমাজ একে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হারটাকে শিক্ষা মনে করে যদি মেনে নেওয়া যায় তাহলে সেটা জয়ের থেকেও বড়ো হয়ে যায়, আর কোন সমস্যা, লজ্জা, বা ভয় থাকে না। সমাজ একটা সুস্থ ব্যাপার কে নিজেদের তৈরি দাঁড়িপাল্লায় ফেলে অসুস্থ করে তুলেছে। জয় মানে সবকিছু আর পরাজয় মানে কিছু না এই ভুল চিন্তাধারার বীজ সবার মনে বপন করে চলেছে।

জীবনকে জয় পরাজয়ের দাঁড়িপাল্লায় মেপে বিচার করা যায় না। জীবনে জয় পরাজয় দুটোরই সমান প্রয়োজনীয়তা আছে। জয় আমাদের পরিশ্রমের স্বার্থকতার আনন্দ দেয়, এগিয়ে নিয়ে যায়, অন্যকে পথ দেখাতে শেখায়। আর পরাজয় আমাদের ব্যর্থতার দুঃখ দেয়, ভুল থেকে শিক্ষা দেয়, নতুন করে লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা জোগায়। ব্যাপারটা অনেকটা অঙ্ক কষার মতো, হয় মিললো নয় মিললো নামিলে গেলে পরের অঙ্কে চলে যাবো, না মিললে আবার করতে হবে। ঠিক সেরকম জিতে গেলে এগিয়ে যেতে হবে আর হেরে গেলে সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে জেতার জন্য আবার তৈরি হতে হবে। দুটো অভিজ্ঞতাই দুরকম শিক্ষা দেয়। তাই জীবনের পথে দুটোরই সমান কৃতিত্ব রয়েছে। তাই জিতলে আমরা যেমন সেটা উদযাপন করি পরাজয়ও উদযাপন করা দরকার।

একটা সুস্থ মানসিকতার পেছনে জয় পরাজয় দুটোরই সমান ভূমিকা আছে। জয়ী হলে তার আনন্দ আর পরাজিত হলে তার দুঃখ দুটোই আমাদের জীবনের চড়াই উৎরাই এর সাথে পরিচয় করায়। আজ জিতলে কাল হারতেও পারি, আবার আজ হারলে কাল জিততেও পারি। কোন কিছুই স্থিতিশীল নয়, দুটো পরিস্থিতিকেই সমান ভাবে গ্রহণ করতে হয়। তাই জিতলে আনন্দে ভেসে যাওয়ার কিছু নেই, আবার হারলে হতাশায় ডুবে যাওয়ার দরকার নেই। জীবন গতিশীল - আজ একরকম হলে কাল অন্যরকম হবে। জয়ের আনন্দ আর পরাজয়ের দুঃখ এই দুই অবস্থার সাথে পরিচয় থাকলে জীবনে যে কোনও পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়, কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না। যে কোনও একটার সঙ্গে পরিচয়ে জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। হার জিত উভয়ের মেলবন্ধন জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলে, তাকে সম্পূর্ণ রূপ দেয়।


ঋতুপর্ণা বসাক

5 comments:

  1. Ashadharon.Erokom mentality thakle sotti jibone prokrito orthe 1jon poripurno manush howa jabe.Protteker jibone success & failure thake r 2toke eki bhabe accept korte shikte hobe taholei jibon sharthok hobe.Excellent Maam

    ReplyDelete
  2. Etai sotti.R baki sob mittha.Joy porajoi 2 tor i proyojon ache.Noile prokrito manus howa jaina.R somaj er kotha bolle bolte hoi " kuch to log kahenge,logo ka kam hain kehna".Tai lorai ta chalie jawatai jibon.Theme jawa tai mrittyu.

    ReplyDelete

শ্রোতা ও বক্তা

  শ্রোতা ও বক্তা শব্দ দুটো নিজেরাই নামের মধ্যে নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়। একজন বলে একজন শোনে। যে বলে সে বক্তা, আর যে শোনে সে ...

Popular Posts