Saturday, February 24, 2024

দিকশূন্যপুর

 


জীবন মাঝে মাঝে আমাদের এমন এক জায়গায় এনে দাঁড় করায় যেখানে আমরা কোন দিক খুঁজে পাই না, সম্পূর্ণ অচেনা এক পরিস্থিতিতে আমরা এসে দাঁড়াই। মনে হয় যেন এক পথভ্রষ্ট পথিক নিজের রাস্তা হারিয়ে কোন এক অজানা দেশে এসে উপস্থিত হয়েছে যেখান থেকে সে বুঝতে পারছে না তার কি করা উচিৎ, কোন দিকে যাওয়া উচিৎ। যেন কোন এক দিকশূন্যপুরে তার এক অযাচিত অতিথি হয়ে সে সেখানে এসে পড়েছে যেখান থেকে ফেরাটা অতটাও সহজ নয় তবে অতটা কঠিনও নয়।

কথায় আছে দিক গতির থেকেও বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারণ দিক আছে গতি নেই চললেও গতি আছে দিক নেই কখনই চলতে পারে না। কখনও কখনও মনে হয় আমাদের চারদিকে অন্ধকার, কোন দিকে এগোবো? আমরা যেন উদ্দেশ্যহীন ভাবে চলেছি যার কোন শুরু বা শেষ নেই। যে দিক নির্ণয় করে এগিয়েছিলাম সেই দিকে আর এগোবো কি না বা উল্টো দিকে ফিরে যাবো কি না সেই নিয়ে মনে দ্বন্দ্ব তৈরী হতে থাকে। 

মাঝে মাঝে এরকম দিকশূন্যপুরে হারিয়ে যাওয়া ভালো কারণ সেখান থেকেই নতুন রাস্তা নতুন দিক আবিষ্কৃত হয় এবং আমরা নিজেদের নতুন দক্ষতা সম্বন্ধে পরিচিত হই। আমরা হয়তো নিজেরাই জানতাম না আমাদের মধ্যে কোন কোন বিশেষ ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। দিকশূন্যপুরে গিয়ে আমরা তাদের নতুন ভাবে খুঁজে পাই যা আমাদের নতুন দিকের সন্ধান পাইয়ে দেয়। প্রত্যেকেই আমরা কখনও না কখনও কোনভাবে দিকশূন্যপুরে গিয়ে উপস্থিত হই কারণ প্রতিটা নতুন আবিষ্কারই কিছু সময়ের জন্য কোন এক দিকশূন্যপুরে হঠাৎ করে পৌঁছানোর পরই হয়

দিকশূন্যপুর এমন এক জায়গা যেখানে বাহ্যিক কোন উপকরণ বা বস্তু কাজ করে না, একে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে হয়। এখানে খুঁজতে হলে নিজের ভেতরে খুঁজতে হয়। গভীর ভাবে নিজের মনের ভেতর উঁকি মারলে সেই হারিয়ে যাওয়া দিক সামনে এসে দাঁড়ায় আর তার সঙ্গে সেখানে পৌঁছানোর রাস্তাও। শুধু শান্ত ভাবে ধৈর্য্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে নিজের মনের ভেতর দৃষ্টিপাত করতে হয়। আর সেখানেই ভেসে ওঠে বিশ্বরূপ এবং অনুভূত হয় বিশ্ববোধ যা আমাদের সবাইকে একাত্মবোধে বেঁধে রাখে

জীবন যাত্রায় চলতে চলতে কোন এক ক্লান্ত অবসন্ন মনে নিজেদের আমরা হারিয়ে ফেলি। চেতনার কোন এক গোধূলি বেলায় সব অনুভূতি, ব্যথা বেদনা নিয়ে, স্মৃতি সঞ্চয় করে দেহ মন ভেসে যায় কোন এক সুদূরপানে। সেখানে যেতে যেতে পরিচিত সব রং, রূপ, লোকালয়, পার, চেনা পরিচিত সব দৃশ্য আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসে। স্থলে, জলে, বিশ্ববৈচিত্র্যে এক নিঃশব্দতা নেমে আসে। আর আমরা হারিয়ে যাই সে এক অচিনপুরে, এক দিকশূন্যপুরে !!!

এক কৃষ্ণ অরূপতা নামে বিশ্ববৈচিত্র্যের পরে
স্থলে জলে। ছায়া হয়ে বিন্দু হয়ে মিলে যায় দেহ
অন্তহীন তমিস্রায়। নক্ষত্রবেদীর তলে আসি
একা স্তব্ধ দাঁড়াইয়া, ঊর্ধ্বে চেয়ে কহি জোড় হাতে—
হে পূষন, সংহরণ করিয়াছ তব রশ্মিজাল,
এবার প্রকাশ করো তোমার কল্যাণতমরূপ,
       দেখি তারে যে পুরুষ তোমার আমার মাঝে এক।       
                                                                                                              - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঋতুপর্ণা বসাক 


4 comments:

  1. Highly philosophical writing that simply paints numerous pictures in the mind & stirs the innermost corners.This is my 2nd most favourite writing by you Maam.I just can't express in words how I'm feeling after reading this.Outstanding🙏🙏👏👏👏👏👏👏👏👏👏🕊🪷🌺

    ReplyDelete
  2. Oshadharon hoyeche maam .....monta bhalo hoye galo ....ebar theke clueless lagle...ei kotha gulo khub mone porbe ...❤️

    ReplyDelete

শ্রোতা ও বক্তা

  শ্রোতা ও বক্তা শব্দ দুটো নিজেরাই নামের মধ্যে নিজেদের চারিত্রিক গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়। একজন বলে একজন শোনে। যে বলে সে বক্তা, আর যে শোনে সে ...

Popular Posts