উমা চলে গেল, সঙ্গে নিয়ে গেল উৎসবের সব আনন্দ, আমেজ, আয়োজন। কয়েকদিনের বাপের বাড়ি সফরে ভবানী তাঁর পরিবার নিয়ে এসে সমস্ত মর্ত্যলোক আলোকিত করে তোলে। এতো আলো, আনন্দ, আয়োজন, হৈচৈ, পরিকল্পনা সব তাঁকে ঘিরেই গড়ে ওঠে। এইকদিন চারদিকে মন্ত্র উচ্চারণ, ঢাকের বাদ্য, কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ পুরো পরিবেশে এক স্বর্গীয় বাতাবরণ এনে দেয়। কিন্তু দশমীর দিন দুর্গার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিকে মন খারাপের হাওয়া বয়ে চলে।
মহালয়া থেকেই গৌরীর আগমনী সুর বেজে ওঠে। চারদিকে ব্যস্ততা, জমজমাট আয়োজন, নতুন করে সব সাজানো পরিবেশে এক অন্য মাত্রা এনে দেয়। ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হওয়ার পরই আসল পুজোর আমেজ শুরু হয়ে যায়। বরণ করে উমাকে ঘরে তোলা হয়। সবার ভবন আলো করে ভবের ভবানী স্বমহিমায় সপরিবারে বিরাজ করে। দেখতে দেখতে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পার হয়ে যায়। সব মিলিয়ে যেন এক বিশাল যজ্ঞ চলে। প্রতিদিন পাঁজি দেখে পুজো, অঞ্জলি, ভোগ, প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যারতি এইসব যেন এইকদিনের নিত্যকর্ম হয়ে ওঠে। মণ্ডপে মণ্ডপে মা দূর্গাকে বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন আয়োজনে আপ্যায়ন চলতে থাকে। সপ্তমীর পুজো, অষ্টমীর অঞ্জলি, অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণের সন্ধিপুজো সম্পূর্ণ করে নবমীতে সর্বশেষ পুজোর আনন্দে সবাই মেতে ওঠে। দিনগুলো যেন মুহুর্তের মধ্যেই চলে যায়। এরপরই বেজে ওঠে দশমীর বিদায়ের সুর। বরণ করে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ী পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। বিসর্জনের বাজনার সঙ্গে সঙ্গে স্বামীর কাছে বিজয়ার গমন হয়।
যে মণ্ডপ ঘিরে এইকদিন এতো হৈচৈ, উৎসব, আনন্দ, অনুষ্ঠান ছিল সেই মণ্ডপই উমার যাওয়ার পর ফাঁকা পড়ে থাকে। শুধু জ্বলন্ত প্রদীপ তাঁর চলে যাওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। একদিকে মেয়ের বাপেরবাড়ী ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ী ফিরে যাওয়ার আনন্দে বিজয়ার মিষ্টিমুখ দুই মিলিয়ে এক মিশ্র অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কুমোরটুলি থেকে গঙ্গাবক্ষ পর্যন্ত যাত্রাটা পলকের মধ্যে যেন শেষ হয়ে যায়। কৈলাস আর ধরিত্রীর মধ্যে আগমন আর গমনের সময়টা নিমেষেই ফুরিয়ে যায়। কাশফুল যাঁর আগমনের বার্তা বয়ে আনে, গঙ্গাজল তাঁর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ইতি ঘটায়। শুধু রেখে যায় এবছরে তাঁর সঙ্গে কাটানো হাজারো স্মৃতি এবং পরের বছরের জন্য একবুক অপেক্ষা।
ঋতুপর্ণা বসাক
❤️❤️
ReplyDelete🙏
Delete🙏🙏🙏👏👏👏
ReplyDelete🙏
Delete