'দূরত্ব' কথাটার মধ্যেই কেমন যেন একটা মন খারাপের গল্প লুকিয়ে রয়েছে। দূরত্ব মানেই যেন একটা অদৃশ্য পাঁচিল তৈরী হবার গল্প তা সে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক যে কোন রকম দূরত্বই হোক না কেন। সব ক্ষেত্রেই এই পাঁচিল গড়ে ওঠার পেছনে কোন কারণ অবশ্যই থাকে। কিছু দূরত্ব আমরা নিজেরা তৈরী করি আর কিছু কোন অদৃশ্য কারণ থেকে গড়ে ওঠে। কিছু দূরত্বের জন্য নিজেরাই দায়ী থাকি আবার কিছু দূরত্ব পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যায়।
সমাজে থাকতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন লোকজন, পরিবেশ, পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত হই; কোথাও সম্পর্ক খুব ভালো হয় কোথাও বা হয় না। অনেকক্ষেত্রে সম্পর্কে অসুস্থতা বোধ করলে সেখানে দূরত্ব বজায় রাখাই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে মানসিক ও শারীরিক উভয় স্বাস্থ্যই সুস্থ থাকে।আবার অনেক ক্ষেত্রে সামান্য মনোমালিন্যে, ভুল বোঝাবুঝিতে দূরত্ব তৈরী হয়। দূরত্বের ফলে একে অন্যের গুরুত্ব বুঝতে পারে।সেক্ষেত্রে মিটিয়ে নেওয়ার একটা ইচ্ছে তৈরী হয়। কেউ কেউ সেটা বিভিন্ন প্রচেষ্টার দ্বারা মিটিয়ে নেয়, কেউ সেটা পারে না। যারা পারলো না সেখানে দূরত্বটা বাড়তে থাকে। আর এই ক্রমবর্ধমান দূরত্বটা একসময় এতটাই বেড়ে যায় যে হাজার চেষ্টা করেও সেটাকে আর মেটানো যায় না। সেই অদৃশ্য পাঁচিলটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এতো বেশি মজবুত হয়ে যায় যাকে সামান্য ছেঁনি বা হাতুড়ি দিয়ে আর ভাঙা সম্ভব হয়ে ওঠে না। হ্যাঁ, হয়তো বুলডোজার চালিয়ে তাকে ভাঙা যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য সেই বুলডোজার অর্থাৎ মনের ইচ্ছে এবং প্রচেষ্টা দুটোকেই সমান ভাবে, সবটা দিয়ে কাজে লাগাতে হবে; নিজের অহংকারকে দূরে সরিয়ে সদিচ্ছার সাথে সেই মনোমালিন্য দূর করার চেষ্টা করতে হবে; তবেই সেই পাঁচিল ভাঙতে পারে, দূরত্ব মিটতে পারে।
কিছু দূরত্ব শত চেষ্টা করেও মেটানো যায় না। কোন প্রিয়জন যদি ইহলোক ছেড়ে পরলোকে পাড়ি দেয়, সেই দূরত্ব মেটানো কোনভাবেই সম্ভব নয়; স্বয়ং ঈশ্বরও সেই দূরত্ব মেটাতে পারেন না। ইহলোকের সঙ্গে পরলোকের যোগাযোগের রাস্তাটা যে একমুখী, দূরত্ব মুছবে কি করে? এই জগতের মানুষ যতক্ষণ না ওই জগতে পৌঁছাচ্ছে ততক্ষণ এই দূরত্ব বহাল থাকবে। আমরা তাদের প্রতি মুহূর্তে মনে করি, তাদের অনুপস্থিতি অনুভব করি, কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না, তাদের স্পর্শ করতে পারি না, তাদের সঙ্গে সুখ দুঃখ ভাগ করতে পারি না। তখন সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটার গুরুত্ব আমরা প্রতি মুহূর্তে অনুভব করি। বিভিন্ন উপায়ে আমরা তাদের মনে করি, বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। কেউ তাদের চোখের জলে স্মরণ করে তো কেউ হাসিমুখে, আবার কেউ বা বিভিন্ন সমাজমূলক কাজের মাধ্যমে তাদেরকে স্মরণীয় করে রাখে। সেক্ষেত্রে মানসিক দূরত্বটা কোনোভাবেই থাকে না, কিন্তু ভৌত বা শারীরিক দূরত্বটা থেকেই যায় যা কোনোদিনও মেটানো সম্ভব নয়।
জীবন খুব দুর্লভ যাকে সযত্নে সস্নেহে বাঁচতে হয়। জীবনে উপস্থিত প্রত্যেকটি জীবের সাথে একটা সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলার চেষ্টা করতে হয় কারণ প্রত্যেকেরই প্রত্যেককে প্রয়োজন হয়। কেউ বেশী কম, ছোট বড় নয়, সবারই সমান অধিকার, সমান গুরুত্ব রয়েছে। তাই যত বেশী আমরা একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকব আমরাই লাভবান হব। নইলে সামান্য কারণে তৈরী দূরত্বটা এতটাই বেড়ে যাবে যাকে হয়তো আমরা কোনোদিনও হাজার চেষ্টা করেও মেটাতে পারব না। তাই যতটা সম্ভব এই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করা যাতে পাঁচিলটা ছোট থাকতেই তাকে আমরা ভেঙে ফেলতে পারি। কারণ মানব সৃষ্ট দূরত্বের ওপর আমাদের হাত আছে কিন্তু নিয়তির সৃষ্ট দূরত্বের ওপর নেই। পরলোকে পাড়ি দেওয়া প্রিয়জনের অভাব আমরা এতটাই অনুভব করি যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই শূণ্যতা আরও বাড়ে বই কমে না। অগণিত চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে ছুঁতে না পারার কষ্ট, তার সঙ্গে কথা বলতে না পারার যন্ত্রণা কমানোর কোনও ওষুধ আজ অবধি আবিষ্কৃত হয় নি। এই ক্ষতি বা লোকসান যা কিছু তা তো আমাদেরই! আর এই ক্ষতি স্বয়ং নিয়তিও পূরণ করতে পারে না কারণ তাঁরই তৈরী নিয়ম সবার জন্য সমান, তাঁর জন্যও!!!
ঋতুপর্ণা বসাক
Amar moner kotha gulo sundor bhabe bolle, Thanks DIDIMONI,
ReplyDeletethank you KAKU
Deleteদুরত্ব সবসময়ই ক্ষতিকর- মানতে পারলাম না - সাধারণ ভাবে হলেও সবক্ষেত্রে নয় -
ReplyDeleteসব জীবের সাথে সৌহার্দ্য সম্পর্ক রেখে চলা - কষ্ট কল্পনা মাত্র
লেখাটি কিছুটা গতানুগতিক এর বাইরে
thank you
DeleteAshadharon likhechen Maam.Moner kotha gulo eto shundor bhabe apnar lekhar moddhe prokash korechen khoob bhalo laglo
Deletethank you
Delete